পশুর দামে নাখোশ খামারি ও পশু পালণকারিরা।
কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে অত্র অঞ্চলের দুইশত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী গাংনী উপজেলার বামন্দী পশু হাট।
ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে,ঐতিহ্যবাহি এ পশু হাটটিতে স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যাপারীদের দরকশাকশিতে সরগরম পশুর হাট।
ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশু হাট ঘুরে দেখা যায়, শেষ দশকে এসে পশু হাটে জমে উঠেছে পশু কেনাবেচাই। তবে অনেক ক্রেতাই ঈদুল আজহা আসতে এখনো কিছুদিন বাকি থাকাই বাজার যাচাই করে কাঙ্ক্ষিত মূল্যে পশু কিনতে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কোরবানির আগের দিন হলেও তাদের চেষ্টা কাঙ্ক্ষিত দামে পশু কিনতে। আর বিক্রেতা ও পশু লালন-পালণকারি চাষিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় সহসাই বিক্রি করছেন না পশু।
ক্রেতাদের অভিযোগ হাটে যথেষ্ট পশুর আমদানি থাকার সত্বেও ব্যাবসায়ী,খামারি ও চাষিরা যুক্তি করে পশুর দাম বেশি চাইছে।
অপরদিকে খামারি ও পশু পালণকারি চাষিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়া ছাড়াও তীব্র গরমে দিনদিন পশুপালণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বতর্মান বাজার দরে পশু বিক্রি করেও আশানরুপ লাভবান হবেন না তারা ।
প্রানী সম্পদ বিভাগের ধারণা কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলেও পশু পালনে তেমন প্রভাব পড়ে না।
সোমবার বামন্দী পশু হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা ক্রেতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আঃ সালাম জানান, আমারা সাতজন মিলে একটা দেশি গরু কিনবো বলে হাটে এসেছি। হাটে এসে দেখি তিন থেকে চার মণ ওজনের গরুর চাহিদা সব থেকে বেশি। আবার তুলনামূলক ভাবে দামটাও বেশি। আমাদের বাজেট ছিল ১ লক্ষ দশ হাজার টাকার মধ্যে একটি দেশি গরু কিনবো। সেই গরু কেনা লাগলো ১ লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। গাছান কেজি হিসেবে পড়ল প্রায় এক হাজার টাকা করে। এরপরও ব্যাপারি বলছে এবার যে বাজার দর চলছে তাতে ধরা খাওয়া।
একই হাটে ছাগল কিনতে আসা প্রবাসী আলাল হোসেন বলেন,আমি পাঁচ বছর দেশের বাইরে ছিলাম, ছুটিতে এসেছি পরিবারের সাথে ঈদ করবো বলে। আজ হাটে এসে ছাগলের দাম শুনে সব উলট পালট লাগছে। যে সব ছাগলের মাংস প্রতি কেজি পড়ত সাতশ থেকে আটশ টাকার মধ্যে এখন তার দাম চাই তেরশ টাকার উপরে। তারপরও বলছে আমাদের তেমন একটা লাভ হবে না।
হোটেল ব্যাবসায়ী শারিকুল ইসলাম বলেন,গরু ছাগলের দাম বাড়তি মূলত এর কারন ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এটা অযুহাত মাত্র।কেননা কশাইরা চাষিদের কাছ থেকে সাড়ে ৫”শ টাকা কেজি দরে গরু কিনে এনে,গোশ হিসেবে সাড়ে ৭”শ টাকা করে বিক্রি করে। আর সেই হিসেবে খামারি ও চাষিরা ঈদ উপলক্ষে হাজার টাকা কেজি দর হিসেবে গাছান (আস্ত গরু)গরুর দাম চাইছে। এতে বাজার অস্থিরতা তৈরী হচ্ছে। তাতে পশু বিক্রি কমে গিয়ে খামারি ও ক্রেতা উভয়ে হতাশায় পড়ছে।
পশু পালণকারি চাষি রেজাউল হক বলেন,আমার চারটি গরু আছে গড়ে তারা প্রতিদিন ১৫”শ টাকার করে খাবার খাই। কোনদিন দেখলাম না প্রানী সম্পদ বিভাগ থেকে লোক এসে গরুর ঔষদ কিংবা কোন খাদ্য দিলো। আমাদের,খুদ,ছাল,ভুশি,খড়,বিচালি সব কিনে খাওয়ানো লাগে। আর সবুজ ঘাস চাষ করতে জমি থাকা লাগে। আর হাটে গরু বিক্রি করতে এসে ব্যাবপারি সহ ক্রেতারা যে দাম বলে,তা শুনে মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। একটা গরু বিক্রি করেছি ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায়। আমার টার্গেট ছিল দেড় লক্ষ পার হবে। কিন্তু হইনি। এখন দেখি সেরকম দাম না পেলে ঈদের আগের দিন পযর্ন্ত অপেক্ষা করবো। না হয় আর কিছুদিন লালণ পালণ করে কশাইয়ের কাছে বিক্রি করবো।
বামন্দী পশুহাট ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন,আমাদের এ হাট ঐতিহ্যবাহী একটি পশুহাট। এটি দুইশ বছরের পুরোনো একটি হাট। সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও শুক্রবার এহাট বসে। আজ সোমবার এ হাটে আনুমানিক প্রায় ত্রিশ হাজার পশু আমদানি হবে। এর মধ্যে কেও চাষি,কেও খামারি,কেওবা কশাই কিংবা ব্যাপারি। আমারা সকলের নিরাপত্তা সব সময় নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। কেও জাতে প্রতারণার শিকার না হয়। তবে এটা ঠিক পশুর দরদাম তারা নিজেরাই নির্ধারণ করে। সে হিসেবে গতবারের চেয়ে এবার পশুর দাম একটু বেশি।
জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান বলেন, মেহেরপুরের আবহওয়া ও জলবায়ু কৃষি কাজ ও গবাদিপশু পালণের জন্য বেশ উপযোগী হওয়াই প্রায় ২৫ হাজার চাষি ও খামারি মিলে গবাদিপশু পালণ করে থাকে। এ জেলার অর্ধেক গো-খাদ্যের চাহিদা পুরন হয়ে থাকে সবুজ ঘাস ও বিচালির মাধ্যমে।
তবে এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভাত,ফল ফুলালি খাওয়ানোর মাধ্যমে পশু গুলোকে লালন-পালণ করে অনেক বড় করে তুলেছেন। তবে এটা ঠিক যতবড় গরু হবে ততবেশি ঝুঁকি। এবার জেলায় প্রায় দুই লক্ষ কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। যার অধিকাংশই চলে যাবে রাজধানী ঢাকা শহ বড় শহরে। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যত পশু প্রস্তুত আছে এর মধ্যে গরু আছে ৫৮ হাজার ৮৬৬টি, ছাগল আছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৯টি। মহিষ আছে ৫৯৫টি ও ভেড়া ২ হাজার ৮৯০টি। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।