মেহেরপুরে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আম পাড়া হচ্ছে
এইচ এম বিল্লাল।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন যায়গায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আম সংগ্রহের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে সুবিধা লুটছেন কিছু অসাধু আম ব্যবসায়ী।
মেহেরপুরে আম সংগ্রহ শুরু হয় ২৫ মে। এটা আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ শে মে থেকে গুটি ও বোম্বাই জাতের আম, উন্নত জাতের আমের মধ্যে ২৮ শে মে থেকে বিখ্যাত হিমসাগর এবং ৫ ই জুন থেকে গোপালভোগ পাড়া যাবে। এছাড়াও ৮ ই জুন ল্যাংড়া, ১৫ ই জুন আমরুপালি, ২০ শে জুন মল্লিকা, ৩০ শে জুন ফজলি, ৩০ শে জুলাই বিশ্বনাথ, সকিনা ও বারি-৪ জাতের আম পাড়তে পারবে চাষীরা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব আম পাড়া শুরু করেছে। একই সাথে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের আমপাড়া দৃশ্য কিন্তু চোখে মেলে। জেলা শহরের কয়েকটি জায়গায় চিটাগাংসহ কয়েকটি এলাকায় পাঠানোর জন্য আম কার্টুন জাত করতেও দেখা গেছে।
ট্রাকযোগে এগুলো চিটাগাং পাঠানো হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক আম ব্যবসায়ী জানান। তবে ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি হননি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম রুপালি, বোম্বাই, বিশ্বনাথ, ফজলি, মল্লিকা ও বারি-৪ জাতের আমের বাগান রয়েছে ২ হাজার ৩’শ হেক্টর জমিতে।
তবে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক বাগানে আমের গুটি ঝরে গেছে এবং সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়েও চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এবছর হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে ১২.৫০ টন।
তবে উৎপাদিত আমের সংরক্ষণাগার ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কারসাজিতে ন্যায্যতা হারাচ্ছেন প্রান্তিক চাষীরা বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী।
একইসাথে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আম সংগ্রহের পূর্বেই তা পেড়ে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা তা ক্রয় করায় চাষীরা ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে জেলায় যদি আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে সেখানে রেখে কিছুদিন পর বিক্রি করে লাভবান হতে পারতো বলেও তারা জানান।
জেলার শ্যামপুর, হিন্দা, তেঁতুল বাড়ীয়া, মাইলমারী ও নওপাড়া গ্রামের কয়েকজন আমচাষী জামান, আম পাকা শুরু হলে দ্রুত আমাদের আম বিক্রি করে দিতে হয়। এ জন্য বাগান মালিকদের বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হয়। এতে করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের অংশ নিয়ে নেয়।” তাছাড়া আরও কয়েকদিন আম রাখার ইচ্ছে থাকলেও হনুমানে যেভাবে লেগেছে তাতে করে গাছে আম রাখা সম্ভব নয়। একারণেই আগাম বিক্রি করতে হচ্ছে।
সোনাপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা আমগাছ কিনি কিন্তু যখন গাছ থেকে আম পাড়া হয় তখন ছোট-বড় সবগুলোই পাড়তে হয়। বড়গুলো বাইরে পাঠিয়ে ছোটগুলো ওষুধ দিয়ে পাকিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে থাকি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মুনসুর আলম খান দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল কে জানান, আম সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসময়ের পূর্বে কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি আম সংগ্রহ করে কিংবা আম পাকানোর জন্য কোন ওষুধ মিশ্রণ করে বাজারজাত করে থাকে এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কারও গাছে আম রাখতে না পারলে কৃষি বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে পাড়া যাবে।