মেহেরপুরে ভিক্ষুকেও নেয়না খুচরা ১ ও ২ টাকার কয়েন : তবে কি অচল!
প্রায় ২ যুগ পূর্বে ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার কয়েনের বেশ প্রচলন ছিল, এখন এর কোন মূল্যই নেই আমাদের দেশে। কারও বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও নেই। তবে ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার কয়েন এখনও আইনত চালু থাকলেও মেহেরপুরের হাট-বাজার বা কেনাকাটার লেনদেনে কোথাও এখন আর প্রচলন নেই বললেই চলে। যদিও ৫ টাকার কয়েনের প্রচলন কোথাও কোথাও থাকলেও একেবারেই অচল ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েন। মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার কোন শহর এমনকি গ্রামেও কেউ নিতে চাইনা। কাউকে দিতে গেলে তাদের কাছে ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েন মানেই হাস্যকর একটা বিষয়। এমনকি ভিক্ষুকরাও খুচরা পয়সা ১ টাকা কিংবা ২ টাকার কয়েন ভিক্ষা নিতে চায় না।
গত কয়েকবছর পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংযুক্ত কয়েন প্রতিটা মানুষ সংগ্রহ করে মাটির ব্যাংকারে জমা করে রাখতে পছন্দ করে থাকলেও এখন মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ করেও ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ টাকা ও ২ টাকার মুদ্রা কয়েন খুঁজে পাওয়া মুশকিল বটে। এমনকি ৫ টাকা মূল্যের পয়সার কয়েন মিললেও সংখ্যায় তা অনেক কম। এই কয়েন গুলোর প্রচলন না থাকার একমাত্র কারণ হচ্ছে কেনাকাটার কোন পর্যায়েই খুচরা পয়সার প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি ১ টাকার কয়েন দিয়েও এখন কিছু কিছু কমদামি চকলেট ও লজেন্স ছাড়া আর কিছুই কিনতে পাওয়া যায়না। বাজারের দোকানে পান বা ভাল চকলেট এমনকি একটি লিচু কিনতেই এখন প্রয়োজন হয় ৫ টাকা। সেজন্য ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েনের অভাবে পান দোকানিরা বিনিময়ে চকলেট দিয়ে লেনদেনের কাজটি সহজেই সেরে ফেলেন অনেক সময়। মেহেরপুরের সকল বাজারে চালু মুদ্রাগুলোর মধ্যে সব চাইতে প্রচলন বেশি রয়েছে ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১’শ টাকা, ২’শ টাকা, ৫’শ টাকা ও ১ হাজার টাকার কাগজের নোট। বাজারে ৫ টাকার কয়েনের প্রচলনও এখন বহুলাংশে কমছে। ভিখারিকে ২ টাকার কয়েন ভিক্ষা দিলেতা ছুঁড়ে ফেলে দেন বাজারে কেউ নেয়না বলে। তবে মেহেরপুর থেকে দূরপাল্লার বাসে ঢাকা যাওয়া আসার পথে সিরাজগঞ্জে এসব কয়েনের যথেষ্ট কদর রয়েছে। কিন্তু মেহেরপুর জেলায় কেন নেই এমন প্রশ্ন সকলের। তবে কি সরকারি ভাবে মেহেরপুর জেলায় এগুলো অচল বলে ঘোষণা করা হয়েছে?
মেহেরপুর জেলার নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের কাছে জিজ্ঞেস করলে প্রায় সকল শিশুই ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা ও ১ টাকার মুদ্রা কখনও দেখেনি শুধু বইয়ে পড়েছে বা ছবি দেখেছে। কেননা তাদের কেনাকাটায় এসব কয়েন কোন প্রয়োজনই পড়ে না। অল্প সংখ্যক শিশু-কিশোর ২ টাকা এবং ৫ টাকার মুদ্রা চিনলেও সেগুলো কেনাকাটায় তারা কোন কাজে লাগাতে পারে না। এদিকে শিশু-কিশোরদের ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার কয়েন দেওয়া হলে তারা তা নিতেও চাইনা, পকেটে রাখলে তা ভারী হবে এবং হাঁটা চলা করতে শব্দ হবে, অনেক সময় তা হারিয়ে যাবে বলে তারা তা পছন্দ করে না বলে অনেক অভিভাবকরাও জানিয়েছেন।
এদিকে ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের খুচরা পয়সা না নেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সারাদিনে জমানো ভিক্ষার খুচরা পয়সাগুলো দিয়ে কোথাও কোন কিছু কিনতে গেলে দোকানদাররা তা নিতে চাইনা। ফলে সারাদিনের ভিক্ষায় অর্জিত খুচরা পয়সাগুলো নিয়ে তা টাকায় রূপান্তর করতে গিয়ে বা কেনাকাটা করতে তাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। এমনকি ব্যাংকে গিয়ে কয়েন বদলিয়ে টাকা নিতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে অবস্থাদৃষ্টে সঙ্গত কারণে এব্যাপারে খোঁজ-খবর করতে গিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এখন ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ টাকা ও ২ টাকা কয়েনের আর কোন প্রয়োজন আছে কি?
তবে কি ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েন মেহেরপুর জেলার বাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এমন প্রশ্ন জেলার সকল ধরনের মানুষের। এব্যাপারে ভুক্তভোগী জনগণ প্রয়াসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যাতে ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েনগুলো তিনারা বাজারে কেনাকাটায় ব্যবহার করতে পারেন।