মেহেরপুরের গাংনীতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ
মেহেরপুরের গাংনীতে নিশাত তাসনীম উর্মী (২৪) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উর্মী গাংনী শহরের পদ্মা এন্টার প্রাইজের স্বত্ত্বাধিকার হাশেম শাহ এর ছেলে এবং কাথুলী মোড়ে ভাড়াবাড়ীতে বসবাসকারী আশরাফুজ্জামান প্রিন্সের স্ত্রী।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর), গভীর রাতে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে উর্মীর লাশ উদ্ধার করে গাংনী থানা পুলিশ।
এদিকে উর্মীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তার বাবা গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বর্তমান বাঁশবাড়ীয়াতে বসবাসকারী গোলাম কিবরিয়া।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার আমি গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে অবস্থান করি। রাত১১/১২ টার দিকে মেয়ের শশুর হাশেম ভাই ফোন কলে জানান, আপনার মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কারণ হিসেবে জানালার সাথে গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে জানালে হাসপাতালে পৌঁছে মেয়েকে মৃত অবস্থায় পায়। এসময় হাসপাতালের ডাক্তার জানায় মেয়ে বাড়িতেই মারা গেছে। মৃত মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসায় আমরা চিকিৎসা সেবা দেইনি।
মেয়ের মা দেখেছেন উর্মীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পিঠে রডের পেটানো দাগ ও গলায় টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন রয়েছে। পরে পুলিশে খবর দিলে লাশ থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
কিবরিয়া আরও জানান, সম্প্রতি আমি আমার মেয়েকে ১ বিঘা জমি দেই। পরে মেয়ে সে জমির দলিলের জন্য আমাকে জানায়। জমি বিক্রি অথবা ব্যাংকে রেখে টাকা নিয়ে প্রাইভেট কার কিনবে নাকি জামাতা। এনিয়ে তাদের ভিতরে বছরখানেক ধরে মনোমালিন্য চলছিল। তিনি জানান, জামাতা ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।
স্থানীয়রা জানান, প্রিন্স মাদকাসক্ত ছিল। এনিয়ে মাঝে মধ্যে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে মনোমালিন্য হতো।
প্রিন্স এর বাড়ির সামনের কয়েকজন জানান, দীর্ঘ ৫ বছর প্রেমের সম্পর্কের পর গত ৪ বছর পূর্বে তাদের দু’জনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১৩ মাসের একটি সন্তানও রয়েছে। উর্মী কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং প্রিন্স কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রাইভেট কার কিনে দেওয়ার জন্য প্রিন্স তার বাবাকে চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হলে ৩০/৪০ টি করে ঘুমের ওষুধ সেবন করে মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনেছি। অবশেষে বাবা হাশেম শাহ ছেলে প্রিন্সকে প্রাইভেট কার কিনে দেয়। তবে মাদকাসক্ত কিনা সে ব্যাপারে তিনারা জানেনা বলে জানান।
এদিকে উর্মীর মৃত্যু নিয়ে গাংনী থানা এলাকায় নানা জনে নানা গুন্জন অব্যাহত রাখেন। কেউ বলেন শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কেউ বলছেন প্রিন্স ভালো ছেলে তার দ্বারা হত্যা সম্ভব নয় তবে বেশিরভাগ লোকের মুখেই হত্যা করা হয়েছে বলে শোনা যায়। তাছাড়া মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
উর্মীর স্বামী প্রিন্স জানান, আমি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বিছানায় উর্মীকে না পেয়ে পানি পানের জন্য গিয়ে উর্মীকে জানালার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি। পরে পরিবারের লোকজনকে জানায়।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য শুক্রবার দুপুরের দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে বোঝা যাবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রিন্স ও তার পরিবারের সদস্যদের গাংনী থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।