বিলগাতুয়া ক্রাইমজোনে চলছে মাফিয়াচক্রের জুলুম
বিলগাতুয়া ক্রাইমজোনে চলছে মাফিয়াচক্রের জুলুম
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আইনের শাসনের পরিবর্তে মাদকসম্রাটদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে বিলগাতুয়া গ্রাম। মাদকচোরাচালানচক্রের আন্তঃকোন্দলের বলি হচ্ছে শান্তিপ্রিয় জনগণ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মোস্টওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত মাদকসম্রাটদের মটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি ও হর্ণে শব্দ দূষণ হলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলছেননা। সাম্প্রতিককালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বিলগাতুয়া গ্রামে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আতংক বেড়েই চলেছে বিলগাতুয়া সিমান্তে। বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কুষ্টিয়ার লাল সবুজের মানচিত্রে মাদকদ্রব্য প্রবেশের একমাত্র রুট বিলগাতুয়া। এই রুট নিয়ন্ত্রণ করেন ডজনখানেক মামলার আসামী মাদকসম্রাট আকিদুল। সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর আকিদুলের পালকে যুক্ত হয়েছে দৌলতপুর জিআর ৫৯৬/২২ নম্বর মামলা। এই মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সে পলাতক। বর্তমানে আকিদুলের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে দৌলতপুর জিআর ৩৩৯/১২, ৩২২/১৪, জিআর ৮১/১৭ (অস্ত্র), জিআর ৫৩/১৭, জিআর ৪২/১৭, জিআর ৫৬৫/২০,জি আর ৩৯৫/২১(বিষ্ফোরণ)সহ ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন। দৌলতপুর উপজেলার জামালপুর,ঠোটারপাড়া,পাকুড়িয়া,মরারচর,ধর্মদহসহ ২৬ টি গোল্ডেন ভিলেজের মাদকসম্রাটরা আকিদুল কে চাঁদা দেয় নিয়মিত। আকিদুলের দেহরক্ষী জামালপুর গ্রামের লালন ও আসাদুল নিয়মিত টাকা তুলে। এই টাকার কমিশন চলে যায় প্রভাবশালীদের পকেটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, দৌলতপুর সিমান্তে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এমন একটি গ্রুপের অজ্ঞাতনামা মুখোশধারী সদস্যরা গত ২৩ অক্টোবর রাত ২ টায় আকিদুলের বাড়িতে হামলা চালায়। ৬টি গরু লুট করে হামলাকারীরা। চুরি যাওয়া ৬ টি গরু জামালপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল সরকার ৬ টি গরু আকিদুলের বাড়িতে পৌছিয়ে দেন। এ রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত (২৬ অক্টোবর সকাল ১১ টা) এই ঘটনার সাথে জড়িত এমন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে। প্রাগপুর কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও বিলগাতুয়া গ্রামের মরজেম মালিথার ছেলে নাইম কে এই ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। পরিবারের দাবি, ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রাগপুর বাজার থেকে মটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়ি যাওয়ার সময় আকিদুলের আশ্রয়দাতা আবুল কালাম মেম্বারের নির্দেশে নাইমের পথরোধ করে লোহার রড দিয় পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর নাইমের বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয় দৌলতপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেযারম্যান বলেন, আকিদুলের গরু উদ্ধার হয়েছে জামালপুর কলোনীতে। সেখানকার আসামী গ্রেফতার হলো না। কিন্তু আকিদুলের কথায় নির্দোষ ক্যাক্তিদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। এদিকে গত ৩ অক্টোবর-২০২২ রাতে বিজিবি’র একটি চৌকস অভিযানিক দল ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ১ টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেন। ৪৭ বিজিবি ব্যাটলিয়নের বিলগাতুয়া বিওপি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার মো. আব্দুর রহমানের ভাষ্যমতে বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় বিলগাতুয়ায় বিজিবির অভিযানে আরো ১টি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার হয়। এই অস্ত্রগুলো কার,কি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মনে। অস্ত্র উদ্ধার হলেও কোন আসামী গ্রেফতার হচ্ছেনা। কিন্তু কেন? মাদকব্যবসায়ীদের ক্রাসের রাজ্যে কেউ ভয়ে মুখ খুলেনা। গত ১৬ অক্টোবর-২০২২ বিলগাতুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত ১ অক্টোবর-২০২২ দৌলতপুর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে বিলগাতুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউল ইসলাম সাধারন ডায়েরী দায়ের করেন। যার নং ৩৭ তারিখ ১/১০/২২ইং। সাধারন ডায়েরী সূত্রে জানা গেছে,গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় একই গ্রামের রমজান বিশ্বাসের ছেলে সাইদুজ্জামান ফড়িং ও ইয়াকুব মন্ডলের ছেলে আবুল কালাম মেম্বার প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে হাজির হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সাইদুজ্জামান ফড়িংয়ের কথামত কাজ না করলে মজা দেখাবে বলে শাসিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সচেতন অভিবাবকমন্ডলীর অভিযোগ, নির্বাচনে মাদকসম্রাটরা পেশী শক্তির বলে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান,আধিপত্য বিস্তার,নির্বিঘ্নে মাদক চোরাচালান নিশ্চিত করতে বিলগাতুয়া গ্রামের ইন্তাজ বাঙ্গালের ছেলে আবু বক্কর বোমা তৈরীর কারখানা গড়ে তোলেন। গত বছরের ১৯ আগস্ট বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরন ঘটলে আবু বক্কর মারাত্মকভাবে আহত হন। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় একই গ্রামের আকবর বিশ্বাসের ছেলে লিটন কে অপহরণ করে নিয়ে যায় বিলগাতুয়া সিমান্তের ত্রাস বাহার আলী। প্রাণভয়ে নিহত লিটনের বাবা দৌলতপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী পর্যন্ত করতে পারেন নি। পরে তিনি কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং দৌলতপুর সিআর ৩২৮/২২।
সম্প্রতি এই গ্রামের ওয়াহিদুল ইসলাম বাদলের কন্ঠসৃত একটি অডিও ভয়েস সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে আরো আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অডিও তে বাদল কে বলতে শোনা যাচ্ছে- “রাজনীতি সব সময় লং টার্ম হয় না,মাঝে মাঝে শট করতে হয়। রাজনীতি করতে খারাপ লোকের দরকার হয়। তাই আমি খরচ করি। আমার সমান কেউ খরচ করে না। সাহা বিশ্বাসের ঠ্যাং ভাইংগি দ্যাও।” বিলগাতুয়া সিমান্তে মাদক মাদক চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৌলতপুর নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিলগাতুয়া গ্রামের সাধারণ জনগণ। তবুও সুরাহা হচ্ছেনা। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বললেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। বিলগাতুয়া ক্রাইমজোনে মাফিয়াচক্রের জুলুম বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেছেন শান্তিপ্রিয় জনতা।