বিএনপি ও তাদের দোসরদের কল্পকাহিনি মোঃ মোফাজ্জেল হক

dainikmeherpurdainikmeherpur
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:40 AM, 26 March 2023

বিএনপি ও তাদের দোসরদের কল্পকাহিনি
মোঃ মোফাজ্জেল হক

বিএনপি ২০০১ সালের পয়লা অক্টোবর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর দেশব্যাপী ঘরবাড়ি, সম্পতি দখলের পাসাপাসি ইতিহাস দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল, তা এখনো করে যাচ্ছে। সেই সময় অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই “সাহিত্য কনিকায়” ‘স্বাধীনতার পথে স্মরণীয় যারা’ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানো হয়েছিল। এখানে বলা হয়েছিল যে জিয়াউর রহমান প্রভিশনাল বাংলাদেশ সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে চট্রগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তৎকালীন সময়ে এই কল্পকাহিনির তথ্যটি সম্পুর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আবিষ্কার করা হয়েছিল।এটি সর্বৈব মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন তার প্রমান দিয়ে গেলেন তাদেরই জোট নেতা তৎকালীন বিএনপি নেতা কর্ণেল অলি আহমেদ।
২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকালে ‘অলির বিস্ফোরক সব মন্তব্য’ শিরোনামে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সেখানে কর্নেল অলি বিএনপির রাজনীতির অন্যতম অনেক বিষয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘জিয়াকে ডেকে এনে যুদ্ধে নামিয়েছি, স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করিয়েছি। ’ ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বমুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সে সম্পর্কে অনেক দালিলিক প্রমাণের সঙ্গে উপরোক্ত বার্ষিক প্রতিবেদনটিও অন্যতম একটি দলিল। পাকিস্তানি সামরিক অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিক তাঁর লিখিত উইটনেস টু সারেন্ডার বইয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের রেডিওতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি ধরা পড়ে।
তৎকালীন বিএনপি আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মওদুদ আহমেদ “বাংলাদেশঃ স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা” নামক গ্রন্থে লিখেন “বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আইনগত অধিকার আদায়ের লক্ষে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার একটি ঘোষণা দেন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করার আহবান জানান “( দ্রষ্টব্য মওদুদ আহমেদ, বাংলাদেশঃ স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, দ্বিতীয় মুদ্রণ ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ২১৯)। মওদুদ আহমেদ অপর একটি গ্রন্থ ” শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল” এর (প্রথম প্রকাশ ১৯৮৩, দ্বিতীয় মুদ্রণ ১৯৯৪) ৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন “এতদিনকার বিক্ষুব্ধ ও জনপ্রিয় নেতা এবং সারাজীবন বিরোধী রাজনীতির মহানায়ক শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি এবং জাতির পিতা “। একই গ্রন্থে ৭ পৃষ্ঠা লিখেছেনঃ বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে ঘোষণা বাণী প্রচার করেছিলেন তা মুজিবনগরে গঠিত গণপরিষদ ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল অনুমোদন করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সালিক “উইটনিস টু সারেন্ডার” গ্রন্থে লিখেন ‘২৫শে মাচ রাত ১২ টার সময় যখন আমি টেক্কা খানের সাথে বসেছিলাম তখন ওয়ারলেস ভেসে আসছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা”।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হানাদার পাকিস্তানিরা আজ পর্যন্ত কখনো বলেনি জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ ইয়াহিয়া খান যে বেতার ভাষন দিয়েছিলেন তাতে শেখ মুজিবুর ও আওয়ামী লীগ কে দোষারোপ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানের পক্ষে যতো বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিলো তার কোথাও জিয়ার নাম নেই। ১৯৭১সালের ৫ই আগষ্ট পাকিস্তান সরকার ৮৮ পৃষ্ঠার যে শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছিল তার কোথাও জিয়া শব্দটি নেই। তার প্রতিটি পৃষ্ঠাই ছিল বঙ্গবন্ধুর ও আওয়ামী লীগের নাম। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল বলেই, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আটক করেছিল, বিচার করেছিল ও মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছল।

কর্নেল অলি, মওদুদ আহমেদ এবং পাকিস্তানি অফিসার ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য এক এবং অভিন্ন। এই বক্তব্যেগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ফুটে উঠেছে। বর্তমানে বিএনপির কল্পকাহিনি বক্তব্য হাস্যরসে পরিনত হয়েছে বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগণের কাছে।
লেখক পরিচিত, সদস্য তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সভাপতি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, কুষ্টিয়া জেলা।

আপনার মতামত লিখুন :